বাংলাদেশের আইন অনুসারে ভাড়াটিয়ার দ্বারা বাড়ির মেরামত - কিভাবে এবং কখন


ভাড়াটিয়া কি আবার বাড়ি মেরামত করে নাকি? এমন কথা তো আগে কখনো শুনি নি । হ্যাঁ, সব কাজের যেমন একটা করে ব্যতিক্রম উদাহরণ থাকে, বাড়ি মেরামতের কাজে ভাড়াটিয়ার সম্পৃক্ততা তেমনই একটি ঘটনা বৈকি । জানতে চান, কখন ভাড়াটিয়া বাড়ি মেরামত করার সুযোগ পাবে? আর তারপরে কি হবে? ? বাংলাদেশের বাড়ি-ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১ নং ধারাতে কিন্তু সব বলে দেওয়া আছে । এখানেই পেয়ে যাবেন যার বিস্তারিত তথ্য ।

সাধারণ প্রথা অনুসারে, অর্থাৎ যদি বাড়িওয়ালা বাড়ির সকল মেরামতের কাজ, যেমন পানির লাইন, লিফট ইত্যাদি ঠিক করা নিজে করার শর্তে বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন, তাহলে সেই কাজের দায়িত্ব তারই । কিন্তু, যদি সঠিক সময়ে সেই কাজ গুলো তিনি পালন না করেন, তাহলেই ভাড়াটিয়া এই কাজ ভূমিকা রাখতে পারবে, তার আগে নয় ।  

কখন ভাড়াটিয়া এই কাজে ভূমিকা রাখতে পারবে

বাড়িওয়ালাকে বলার পরেও বাসা মেরামতের কাজ করছেন না, এখন কি ভাড়াটিয়া চাইলেই নিজে মেরামতের কাজগুলি করে ফেলতে পারবে? উত্তর হচ্ছে -”না” । বাড়িওয়ালাকে বলার পরেও বাড়ির প্রয়োজনীয় মেরামত না করার পর, ভাড়াটিয়াকে নিয়ন্ত্রক (সাধারণত ওয়ার্ড কাউন্সিলর) বরাবর আবেদন করতে হবে । তিনি বাড়িওয়ালাকে প্রয়োজনীয় মেরামতের জন্য নোটিশ পাঠাবেন ।  

নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে যদি বাড়িওয়ালা মেরামতের কাজ না করেন, এবং নিজ কর্তব্য উপেক্ষা করে, তাহলে ভাড়াটিয়াকে মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় আনুমানিক একটি খরচের হিসাব সহ মেরামতের কাজ নিজে করার জন্য নিয়ন্ত্রকের কাছে আরেকবার আবেদন করতে হবে ।

নিয়ন্ত্রকের অনুমতি পাওয়ার পরে উল্লেখিত অর্থের মাঝে ভাড়াটিয়া মেরামতের কাজগুলো করতে পারবে । যদি বেশি খরচ হয়, তাহলে বাড়তি খরচ ভাড়াটিয়ার পকেট থেকে যাবে।

জরুরী মেরামতের ক্ষেত্রে করণীয়

যদি মেরামতের কাজ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়, যে সেটা তাৎক্ষনিকভাবে না করলে ভাড়াটিয়ার জীবনযাত্রায় অনেক বড় ক্ষতি হবে, তখন ভাড়াটিয়া নিজেই বাড়িওয়ালার উপর নোটিশ জারি করতে পারবে ।  এবং বাড়িওয়ালাকে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা মেরামতের সময় দিতে পারবেন । এইক্ষেত্রে মেরামতের আনুমানিক খরচ নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে।  

যদি ৭২ ঘণ্টার মাঝে মেরামত না করা হয়, তাহলে ভাড়াটিয়া নিজেই মেরামতের ব্যবস্থা করবে, এবং খরচের অর্থের একটি কপি, যেটা বাড়িওয়ালাকে নোটিশে উল্লেখ করেছিলেন তা নিয়ন্ত্রককে পাঠাবেন ।

যেভাবে মেরামতের টাকা ভাড়াটিয়া ফেরৎ পাবে

বাড়িওয়ালাকে যে ভাড়াটা ভবিষ্যতে দেওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে ভাড়াটিয়া টাকাটা রেখে দিতে পারবে । অথবা, বাড়িওয়ালার সাথে সমঝোতার মাধ্যমে অন্য কোনভাবে পরিমাণটুকু বুঝে নিতে পারবে ।  

এইখানে পরিমাণ নিয়ে একটা নিয়ম আছে । মেরামতের টাকা কোনভাবেই ১ বছরের নির্ধারিত ভাড়ার ৬ ভাগের ১ ভাগের বেশি হতে পারবে না ।  

সাধারণত নিয়ন্ত্রকের কোন ভূমিকা প্রয়োজন হবেনা, যদি বাড়িওয়ালা নিজের ব্যস্ততার কারনে ভাড়াটিয়াকে মেরামত করে নিতে বলে, এবং তারা টাকা দেওয়ার এবং দায়িত্ব পালনের ব্যাপারটা কাগজে কলমে মিটিয়ে ফেলে ।  

দেখলেন তো কত সুন্দর ভাবে বাড়ি ভাড়ার আইনে সব সমস্যার সমাধান দেওয়া আছে, শুধু আমরা তথ্যগুলো জানিনা । বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়ার দায়িত্বগুলো সম্পর্কে আরো জানতে স্কয়ারফিটের সাথেই থাকুন ।  


বাড়ি ভাড়ার রশিদ ঠিকমত ভাড়াটিয়াকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তো । দেখে নিন বাংলাদেশের আইন কি বলে -

বাংলাদেশের আইন অনুসারে বাড়ি ভাড়ার রশিদ দিচ্ছেন তো?
সমীক্ষাতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় কোন রশিদ দেন না । লেন-দেনটা যদি হয় বাড়ি ভাড়া দেওয়া নেওয়া, তাহলে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু আমাদের সার্ভে বলছে প্রায় ৬১.১% বাড়িওয়ালা কোন ধরনের রশিদ কখনো দেন না।